Wednesday, March 13, 2013

রাস্তায় সন্তান প্রসব : মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ডাক্তার নেই, বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুর

রাস্তায় সন্তান প্রসব : মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ডাক্তার নেই, বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরসন্তানসম্ভবা এক গৃহবধূ গত মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলা শহরের মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে তাঁর সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হতে আসেন। চিকিৎসক না থাকায় কর্তব্যরত নার্স তাঁকে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেন। এ সময় হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার পর পরই তাঁর প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এতে তিনি বাঁধ্য হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। সেখানেই সন্তান প্রসব হয় তাঁর। প্রশ্ন হলো, মা ও শিশু সেবার জন্য যে কেন্দ্র তৈরি করা হলো, সেখানে প্রসূতি কী সেবা পেলেন? জানা যায়, জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র  ল'ইয়ার্স কলোনিতে ১০ শয্যার এই মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সন্তান প্রসব ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স না থাকায় প্রায়ই মা ও শিশুরা এসে ফিরে যায়। কেন্দ্রটিতে দুজন চিকিৎসক, চারজন নার্সসহ ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ রয়েছে। এ পদগুলোর বিপরীতে একজন নার্স দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে।

ফলে এখানে কোনো মা ও প্রসূতি সেবা নিতে পারেন না। ল'ইয়ার্স কলোনির বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন আহমেদ ফরহাদ জানান, গতকাল সকাল ৮টায় জেলা শহরতলির পূর্ব অশ্বদিয়া গ্রাম থেকে দিনমজুর মো. ফারুকের স্ত্রী শেফালী বেগম প্রসববেদনা নিয়ে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আসেন। সকাল ১০টায় সেখানে নার্স রোকেয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। প্রসূতিকে দেখে তিনি 'এখানে কোনো চিকিৎসা হবে না' বলে অন্যত্র চলে যেতে বলেন। এ সময় ওই প্রসূতি হাসপাতালের বাথরুম ব্যবহার করতে চাইলেও নার্স রোকেয়া তা ব্যবহার করতে দেননি। ওই প্রসূতি মা ও শিশুকল্যাণ থেকে বেরিয়ে ১০০ গজ দূরে আসার পর পরই তাঁর প্রসববেদনা শুরু হয়। এ সময় তিনি রাস্ত য় শুয়ে পড়েন। রাস্তাতেই তাঁর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরে লোকজন স্থানীয় রফিক ডাক্তারের বাসায় নিয়ে প্রসূতি ও নবজাতককে সেবা দেয়। বর্তমানে প্রসূতি ও নবজাতক দুজনই সুস্থ আছে। এলাকাবাসী দ্রুত এখানে চিকিৎসক ও নতুন নার্স নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে নার্স রোকেয়া সুলতানা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় তিনি শেফালীকে অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে বাথরুম ব্যবহার না করতে দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। মা ও শিশুকল্যাণ হাসপাতালের দায়িত্বরত নোয়াখালী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক আমির হোসেন জানান, এক মাস ধরে এখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার নাসরিন সুলতানা ছুটিতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এ ছাড়া কর্তব্যরত নার্স প্রসূতির সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে , বুধবার বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এসময় তারা কেন্দ্রটির বিভিন্ন রুমের জানালার গ�াস ও দরজা ভাঙচুর করে। এ প্রতিবেদক ভাঙচুর চলাকালীন  সরজমিনে  গিয়ে দেখতে পান, কেন্দ্রটির সকল কক্ষ তালা বন্ধ। দুতলায় অবস্থিত কল্যাণ কেন্দ্রটির কলাপসিবেল গেইটে তালা মারা। সেখানে আবু সুফিয়ান রকি নামে একজন ফার্মাসিষ্ট ও রোকেয়া নামে একজন ভিজিটর ভাঙচুরের সময় বেরিয়ে আসেন। তারা তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তারা বলেন , দীর্ঘদিন থেকে এখানে ডাক্তার নেই। ডাঃ তোফাজ্জল হোসেন চার্জে থাকলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উত্তেজিত জনতা এ সময় ক্ষোভের সাথে জানান এখানে দীর্ঘদিন থেকে ডাক্তার ও নার্স নেই। একটি সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ বেহাল অবস্থা আর কোন জেলাতে আছে কিনা  তা আমাদের জানা নেই। লাখ লাখ টাকার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকলেও কোন সেবা নেই। তাহলে এই কেন্দ্রটি থেকে গরিব মানুষের লাভ কি? জনগণের টাকায় ডাক্তার ও নার্সেরা বসে বসে বেতন তুলছেন।

No comments:

Post a Comment